বদরুল ইসলাম বাদল

কথাটি এখন আর সপ্ন নয় বাস্তবতা যে, “উন্নয়নের পথে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ”।অপ্রতিরোধ্য অগ্রগতি দৃশ্যমান দেশের সবজায়গায় সর্বক্ষেত্রে। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর আদলে পদ্মা সেতুর মত মেগা প্রকল্প বাস্তবায়নে সাহস দেখিয়েছে,তাও নিজের টাকায়।১৮ কোটি মানুষের ভার বহন করে ছোট আয়তনের দেশটি মানব উন্নয়নের বিভিন্ন সূচক নিয়ে উচ্ছ্বসিত প্রশংসিত হচ্ছে বিশ্বের নামীদামী অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞদের পর্যালোচনায়।বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এই সৃষ্টিশীলতার নেপথ্যের কারিগর বঙ্গবন্ধু তনয়া শেখ হাসিনা এবং এসকল চ্যালেন্জ মোকাবেলায় প্রবাসীদের অবদান অস্বীকার করার কোন সুযোগ নাই।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও স্বীকার করেছেন বারংবার বহু সময়।এদেশের অর্থনীতিতে প্রবাসী আয়ের অবদান মোট জিডিপির প্রায় ১২ শতাংশ।এককোটি বিশ লাখের অধিক প্রবাসী বিশ্বের ১৬০টি দেশে বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত রয়েছেন।কমকরে হলেও প্রবাসী পরিবারের সদস্য আনুমানিক আড়াই কোটি এবং তাদের সুবিধাভোগীর সংখ্যাও হতে পারে প্রায় কোটির উপর। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এই বিশাল জনগোষ্ঠীর সমস্যা তুলে ধরার জন্য সংসদে নিজস্ব কোন প্রতিনিধি নাই। তাই সংসদের সংরক্ষিত আসনে প্রবাসীদের প্রতিনিধি চায়, প্রবাসীও তাদের পরিবার,নতুন সরকারের কাছে। আওয়ামী প্রবাসী লীগের সভাপতি আল-মামুন সরকার,”সংরক্ষিত আসনে দুইজন প্রবাসী প্রতিনিধির দাবি করছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে”।

খবরের কাগজ সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায় যে, দেশের কোথাও না কোথাও প্রতিদিন প্রবাসীরা অসম্মানিত হচ্ছে। শোষণের স্বীকার হচ্ছে,দখলদারদের কুনজরে হারাচ্ছে সহায় সম্পত্তি।নিপীড়নের স্বীকার হচ্ছে তাদের পরিবারের সদস্যরা।
জীবিকার তাগিদে নিজের সুখ বিলাসিতা জলাঞ্জলি দিয়ে পরিবার এবং দেশের জন্য প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করা সত্যিকারের রণাঙ্গনের সৈনিক প্রবাসীরা।সকলের কাছে অঘোষিত “রেমিট্যান্স যোদ্ধা” উপাধির প্রবোধ নিয়ে শুধু বাহবাতে রয়েছে তাঁরা।প্রবাসী সুরক্ষা আইন নিয়ে দীর্ঘদিন দাবি করে আসলেও কার্যকর হচ্ছে না। ।অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ডামাডোলের মধ্যেই ২০২৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো পালিত হলো “জাতীয় প্রবাসী দিবস”।যার প্রতিপাদ্যে ছিল, “প্রবাসীর কল্যাণ মর্যাদা- আমাদের অঙ্গিকার, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ায় তাঁরাও সমান অংশীদার”।তবে কয়েকজন প্রবাসীদের সাথে কথা বলে দেখা যায় যে,”জাতীয় প্রবাসী দিবস” নামে একটি দিন রয়েছে, তাদের কোন ধারণাই নাই।মুষ্টিমেয় কয়েকজন ছাড়া কেউ জানে না। কারণ “জাতীয় প্রবাসী দিবস” নিয়ে কোন প্রচার-প্রচারণা হয় নাই।অনেকের মতে, প্রচারবিহীন নিরুত্তাপ উদাসীনতায় শুধু আনুষ্ঠানিকতার মধ্য দিয়ে শেষ হলো দিবসটি।অনেকে মনে করছে শুধু মাত্র বিধিগত বাধ্যবাধকতায় উদযাপনের নামে উদযাপিত হলো, প্রবাসীদের মাঝে সাড়াজাগানো গেল না দিবসটি ।২০২২ সালের ৩০ ডিসেম্বর মন্ত্রী পরিষদের সভায় দিনটিকে ” জাতীয় প্রবাসী দিবস” ঘোষণা করে পরিপত্র জারি করেন সরকার। এরই পরিপ্রেক্ষিতে প্রথম বারের মতো “জাতীয় প্রবাসী দিবস” পালিত হলো। প্রায় একমাস আগে থেকে দিবসটি নিয়ে প্রচুর প্রচার করা দরকার ছিল, মনে করেন আওয়ামী প্রবাসী লীগের কক্সবাজার জেলা সভাপতি হাজী লিয়াকত হায়াত।

চলতি বছরের জানুয়ারীর ৭ তারিখ অনুষ্ঠিত হলো দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বহু নাটকীয় ঘটনার পর শেষ পর্যন্ত মোটামুটি শান্তি শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই সম্পন্ন হয়েছে মনে করে সংশ্লিষ্ট পর্যবেক্ষক মহল।
এবারের নির্বাচনে রাজনীতিবিদদের পাশাপাশি
সমাজের নানা শ্রেণী পেশার মানুষও ভোটের প্রতিযোগিতায় ছিলো । কেউ দলীয় সমর্থন কিংবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে।এই নির্বাচনে দলের ত্যাগীরা যেমন লড়াইয়ে ছিল তেমনি ছিল উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রাজনীতির বাইরে থেকে আসা বিভিন্ন পেশার মানুষ। ব্যবসায়ীদের কথা বাদ দেওয়া হলেও নিন্দিত নন্দিত, আলোচিত সমালোচিত অনেক প্রার্থীতেই আলোচিত ছিল এবারের নির্বাচন। নায়িকা মাহিয়া মাহি, নায়ক ফেরদৌস,গায়ক ডলি সায়মন্তনী,নকুল কুমার বিশ্বাস এবং হিরো আলম সহ আরও অনেক পরিচিত চেহারা দেখেছে মানুষ ।শাকিব আল হাসান ও মাশরাফি বিন মুর্তজা সাংসদ নির্বাচিত হয়।কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি যে দেশের অর্থনীতিতে অক্সিজেনখ্যাত প্রবাসীদের থেকে কেউ সাংসদ নির্বাচিত হয়ে আসে নাই। এমনকি কোন রাজনৈতিক সংগঠনও প্রবাসীদের মনে নির্বাচন করার জন্য আগ্রহ জাগাতে পারেনি কিংবা আস্থায় এনে নির্বাচনে আসার পরিবেশ সৃষ্টির প্রচেষ্টার অভাব ছিল। ফলে বিশাল এসকল জনগোষ্ঠী রাষ্ট্রীয় অংশীদারিত্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে মহান সংসদে তাদের সুখদুঃখের কথা বলা সুযোগ থাকছে না।চিরবঞ্চিত প্রবাসীদের গল্প হয়তো পর্দার অন্তরালেই রয়ে যাবে এবং সমস্যা গুলো একসময় বাসি হয়ে মরে পঁচে যাবে।এই নিরিখে বিভিন্ন প্রবাসী সংগঠনের সাথে আলোচনার মাধ্যমে কক্সবাজার জেলা প্রবাসী সংগঠনের সভাপতি এবং চকরিয়া প্রবাসী ইউনিয়নের সভাপতি মোঃ মুবিনুল ইসলাম কয়েকটি প্রস্তাব উপস্থাপন করেন বর্তমান নতুন সরকারের কাছে।
১)মহান জাতীয় সংসদে আনুপাতিক হারে সংরক্ষিত আসনে প্রবাসীদের প্রতিনিধি চাই।
২)জেলা/উপজেলায় প্রশাসনের মাসিক সভায় এবং আইন শৃঙ্খলা কমিটিতে প্রবাসী সংগঠনের প্রতিনিধি রাখতে হবে এবং প্রবাসী পরিবারের সমস্যা গুলো নিয়ে কথা বলার সুযোগ দিতে হবে।
৩)প্রতিটি থানায় কার্যকর প্রবাসী ডেক্স চালু করতে হবে। ছুটিতে আসা প্রবাসীদের আইনী জটিলতা সমূহ সল্প সময়ে নিষ্পত্তির নির্দেশনায় আইন তৈরী করা দরকার।
৪)সর্বোপরি প্রবাসী পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা, সম্পত্তির জবরদখল থেকে রক্ষায় প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করি।
৫)সল্প সময়ে পাসপোর্ট জটিলতার সমস্যা সমাধান করতে হবে।

সচেতন মানুষের অভিমত যে, বিভিন্ন কারণে দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভালো নয়।নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর এখন অর্থনীতির উপর জোর দেওয়া দরকার।তাই ডলার সংকট মোকাবেলার জন্য রেমিট্যান্স প্রবাহের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে সরকারকে।
আর রেমিট্যান্সের জন্য প্রবাসী কর্মী ও তাদের পরিবারের নিরাপত্তার উপর খেয়াল দিতে হবে বেশি।কারণ তাঁরা আশংকামুক্ত হতে না পারলে কাজে মনোনিবেশ করতে পারবে না।অনেকে অভিযোগ করেন যে, “প্রশাসনের দায়সারা গোছের আইনী পদক্ষেপে পার পেয়ে যায় কুচক্রী মহল। মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান এইড ইন্টারন্যাশনাল কক্সবাজার জেলার সভাপতি বিশিষ্ট মানবাধিকার নেতা সাইদুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, “প্রবাসী ভাইয়েরা সোনার ডিম পাড়া হাঁসের মতো শুধু দেশকে দিয়েই যাচ্ছেন।তাদের এবং পরিবারের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার দায়িত্বের প্রতি বিশেষভাবে নজর রাখার দাবি জানাচ্ছি সরকারের প্রতি।প্রবাসী পরিবারের বিপদআপদে আমার সংগঠন হিউম্যান এইড সব সময় তাদের পাশে থাকবে”।

সামাজিক নিরাপত্তা অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্যতা হ্রাস, অর্থনৈতিক উন্নয়ন সহ সর্বক্ষেত্রেই বিশ্বে বাংলাদেশ এক বিস্ময়ের নাম। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের এমন কোন দিক নাই, যেখানে অগ্রগতির ছোঁয়া লাগেনি।আর এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বদ্ধপরিকর।প্রবাসী দিবসের প্রতিপাদ্যের সাথে একাত্ম হয়ে প্রবাসীরা প্রধানমন্ত্রীর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার সাথে থাকতে চায়। প্রবাসীরা অংশ নিতে সুযোগ চায় ।তাই তাদের সমস্যা গুলো তুলে ধরার এবং সমাধানে কথা বলার একমাত্র প্লাটফর্ম সংসদ।তাই তাঁরা সংসদের সংরক্ষিত আসনে দুইজন প্রবাসী প্রতিনিধিত্ব চায়।আশা করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুবিবেচনায় রাখবেন।


কলামিস্ট ও সাবেক ছাত্রনেতা।